Wellcome to National Portal
Text size A A A
Color C C C C

সর্ব-শেষ হাল-নাগাদ: ২০ মার্চ ২০২৩

মহাপরিচালকের বাণী

স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে ঐতিহ্যময় সোনালী আঁশ

ড. সেলিনা আক্তার

মহাপরিচালক, পাট অধিদপ্তর

 

পাট বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্যের অবিচ্ছেদ্য অংশ । স্বাধীনতার পূর্ব হতেই পাট ছিল বৈদেশিক মূদ্রা অর্জনের প্রধান খাত, যা বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পরও দীর্ঘদিন বজায় ছিল। পরবর্তী সময়ে আশির দশকে বিশ্বব্যাপী প্লাস্টিক ও পলিথিনের ব্যবহার বৃদ্ধির ফলে এ ধারায় কিছুটা ছেদ পড়লেও সম্প্রতি জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বিশ্বব্যাপী পরিবেশ বিপর্যয় রোধে প্রাকৃতিক তন্তুর ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে। পলিথিনের বিকল্প হিসেবে পরিবেশ বান্ধব সোনালী ব্যাগ, পাটখাত হতে স্বাস্থ্যসম্মত পানীয়, জুট জিও টেক্সটাইল বহুমুখী পাটপণ্য ইত্যাদি উদ্ভাবনের ফলে দেশে-বিদেশে পাটের ব্যাপক চাহিদার সৃষ্টি হয়েছে এবং বিশ্বব্যাপী পাটের এ চাহিদা পূরণের জন্য বাংলাদেশের উৎপাদিত পাট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে সক্ষম। জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অকৃত্রিম ভালোবাসা আর সময়োপযোগী ইতিবাচক পদক্ষেপের কারণে পাটখাত আজ দেশের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় এক অন্যতম অনুষঙ্গ। ২০১৬ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ৬ মার্চকে জাতীয় পাট দিবস ঘোষণা করেন। এ প্রেক্ষাপটেই ‘পাট শিল্পের অবদান, স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ’ - প্রতিপাদ্যে ৬ মার্চ ২০২৩ জাতীয় পাট দিবস উদযাপিত হচ্ছে। নতুন প্রজন্মকে পাটের সোনালী ইতিহাস ও ঐতিহ্য সম্পর্কে অবহিতকরণ, পাট ও পাটবীজ এবং বহুমুখী পাটপণ্য উৎপাদনে উদ্বুদ্ধকরণ এবং পাটপণ্য ব্যবহার বৃদ্ধির মাধ্যমে পাটের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বাজার সম্প্রসারণে এ দিবসের তাৎপর্য অপরিসীম।

 

উৎকৃষ্ট মাটি ও উপযুক্ত আবহাওয়ার কারণে বাংলাদেশে বিশ্বের সেরা মানের পাট উৎপন্ন হয়। বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় এক চতুর্থাংশ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে পাট এবং পাট শিল্পের সাথে জড়িত। বিশ্ব বাজারেব চাহিদার শতকরা প্রায় ৯০ ভাগ কাঁচাপাট এবং শতকরা প্রায় ৪০-৫০ ভাগ পাটজাত পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ সর্বোচ্চ পাট রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে পরিচিত। শিল্পখাত বিবেচনায় পাটশিল্প এখনো বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্প। পাট একটি পরিবেশ বান্ধব ফসল এবং পরিবেশ রক্ষায় এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। পাট উচ্চমাত্রায় কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাস শোষণ করে গ্রিন-হাউজ গ্যাসের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে পরিবেশকে রক্ষা করে। পলিথিন বা সিনথেটিক পণ্যের পরিবর্তে শতভাগ পাটপণ্য ব্যবহারে পরিবেশ দূষণ বহুলাংশে কমছে। এ ছাড়াও পাটচাষে  পাট গাছের শিকড় ও ঝড়ে পড়া পাতা পঁচে মাটির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধিসহ কীটপতঙ্গ ও অন্যান্য ফসলের রোগ সৃষ্টিতে বাধা প্রদান করে। ফলে পাট চাষ পরবর্তী ফসলে চাষী তুলনামূলকভাবে বেশী লাভবান হয়। অর্থকরী ফসল হিসেবে পাটখাত জাতীয় অর্থনীতিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে।

 

মানসম্মত পাটের উৎপাদন বৃদ্ধি, পাটের ঐতিহ্য ও গুণগতমানের অঙ্গীকারকে সমুন্নত রাখা এবং পাটবীজ উৎপাদনে স্বয়ম্ভরতা অর্জনের লক্ষ্যে সরকার পাট অধিদপ্তরের আওতায় ‘উন্নত প্রযুক্তি নির্ভর পাট ও পাটবীজ উৎপাদন এবং সম্প্রসারণ’ শীর্ষক প্রকল্পটি জুলাই, ২০১৮ হতে মার্চ ২০২৩ মেয়াদে বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্পটি দেশের ৪৫টি জেলার ২২৭টি উপজেলায় বাস্তবায়িত হচ্ছে । উক্ত প্রকল্পের মাধ্যমে প্রকল্পভুক্ত ৬.২৫ লক্ষ পাট চাষীকে প্রতিবছর বিনামূল্যে বীজ, সার, বালাইনাশকসহ কৃষি যন্ত্রপাতি প্রদান করা হচ্ছে। তাছাড়া পাটচাষের উন্নত কলাকৌশল সম্পর্কে পাট চাষীদের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের ফলে গুণগত মানসম্মত পাট ও পাটবীজ উৎপাদন বহুলাংশে বৃদ্ধি পাবে।

 

পরিবেশ দূষণ রোধ ও পাটজাত পণ্যের অভ্যন্তরীণ ব্যবহার বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকার কর্তৃক “পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইন,২০১০” ও এর অধীনে প্রণীত বিধিমালার আওতায় ধান, চাল, গম, ভুট্টা, সার, চিনি, মরিচ, হলুদ, পেঁয়াজ, আদা, রসুন, ডাল, ধনিয়া, আলু, আটা, ময়দা, তুষ-খুদ-কুড়া, পোল্ট্রি ও ফিসফিড মোড়কীকরণে পাটের ব্যাগ ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এ আইনের বিধান অমান্যকারীর শাস্তি অনধিক এক বছর কারাদণ্ড বা অনধিক ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড। আইনটি বাস্তবায়নের ফলে অভ্যন্তরীণ বাজারে পাটের ব্যাগের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং পলিথিনসহ বিভিন্ন সিনথেটিক ব্যাগ ব্যবহারের মাত্রা হ্রাস পেয়ে পরিবেশের মারাত্বক দূষণ প্রশমিত হচ্ছে। এ আইনের শতভাগ বাস্তবায়নে ব্যবসায়ী প্রতিনিধি, জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া, সুশীলসমাজ ও জনপ্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সর্বাত্মক সহযোগিতা একান্ত প্রয়োজন।

 

            বাণিজ্যিকভাবে পাট খড়ি ব্যবহার করে চারকোল উৎপাদন করা হচ্ছে। পাট আঁশের পাশাপাশি চাষীরা সম্প্রতি পাটখড়ি বিক্রি করেও লাভবান হচ্ছেন। পাট পানীয়তে ব্যবহারযোগ্য পাট পাতা বিক্রি করেও অর্থ উপার্জনের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। বছরে প্রায় ৩০ লাখ টন পাটখড়ি জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ায় বন উজারের হুমকি হ্রাস পাচ্ছে। পাট থেকে পলিথিনের বিকল্প হিসেবে পাট পলিমার বা সোনালী ব্যাগ উৎপাদিত হচ্ছে। কোভিড-১৯ এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরবর্তী বিশ্বপরিস্থিতিতে অর্থনীতিতে অধিক মূল্য সংযোজনের অন্যতম খাত পাটখাতের উপর জোর দেয়া অতি জরুরি হয়ে দাড়িয়েছে। বাংলাদেশ সর্বোচ্চ পাট রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে পরিচিত। ২০২১-২২ অর্থবছরে সার্বিক পাটখাত হতে ১১২৭.৬৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্জিত হয়েছে। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে এ খাতে ১২৮০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার রপ্তানির লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, যা গত অর্থবছরের তুলনায় ১৩.৫৭% বেশী।

 

অপরিকল্পিত নগরায়ন, শিল্পায়ন, বসতবাড়ি নির্মাণ এবং বহুমূখী ফসল উৎপাদনসহ নানাবিধ কারণে পাট চাষের উপযোগী উর্বর জমি এবং পাট পঁচানোর জন্য প্রয়োজনীয় জলাশয় ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাচ্ছে। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা ও ক্রমহ্রাসমান কৃষি জমির কারণে পাটের উৎপাদনে পরিমাণগত গুণগত ঐতিহ্যের ধারা বজায় রাখা এক কঠিন চ্যালেঞ্জ। ভালো বীজের উপর যে কোন ফসলের মান বা ফলন ইত্যাদি নির্ভর করে। উপযুক্ত জমি এবং মানসম্মত পাট বীজের ঘাটতি পাট উৎপাদনে একটি অন্যতম বড় বাঁধা। বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইন্সটিটিউট উন্নত পাটের জাত আবিস্কার করলেও দেশের মোট চাহিদার প্রায় ৬৫ ভাগ পাটবীজ পাশ্ববর্তী দেশ হতে আমদানি করতে হয়। ফলে সময়মত মানসম্মত বীজের অভাবে অনেক সময় পাট উৎপাদন হুমকির মুখে পড়ে। টেকসই পাট খাত তৈরির লক্ষ্যে পাটবীজ উৎপাদনে পাটচাষীদের সয়ম্ভরতা অর্জন এবং চাষীদের উৎপাদিত পাটের ন্যায্যমূল্য প্রদান নিশ্চিত করাও জরুরি।

 

পাট ও পাটজাত পণ্যের ব্যবহার বৃদ্ধির মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বাজার সম্প্রসারণ করা প্রয়োজন। জুট ডাইভারসিফিকেশন প্রমোশন সেন্টার(জেডিপিসি) এর আওতায় বেসরকারি বিভিন্ন উদ্যোক্তাগণ এ পর্যন্ত ২৮২ ধরণের অধিক পাটপণ্য উদ্ভাবন করে বিপণন করছে। প্রতিযোগিতামূলক বাজারে লাভজনক পর্যায়ে টিকে থাকার জন্য এসব পণ্য আরো আকর্ষণীয় ও গুণগত মানসম্পন্ন করা প্রয়োজন। এ জন্য প্রয়োজন উন্নত গবেষণা ও সংশ্লিষ্টদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ প্রদান। বাজার সম্প্রসারণের লক্ষ্যে নতুন নতুন বাজার অনুসন্ধান করা। অভ্যন্তরীণ বাজারে পাটের ব্যাগ/বস্তা ব্যবহার বৃদ্ধির লক্ষ্যে “পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইন, ২০১০” বাস্তবায়ন করা।

 

পাট খাতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর অংশগ্রহণ এবং রপ্তানি বহুমুখীকরণের ক্ষেত্রে সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে পাটজাত পণ্যের রপ্তানি বাড়ানো দরকার। পাট একটি শ্রমঘন ফসল যার উৎপাদন, বাজারজাতকরণ, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও ব্যবহারের পর্যায়ে ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে। পাটজাত পণ্যের মান উন্নয়ন ও আন্তর্জাতিক মানে উন্নীতকরণের লক্ষ্যে সরকারি ও বেসরকারি পাটকলগুলো পর্যায়ক্রমে আধুনিকায়ন, উন্নত যন্ত্রপাতি সংযোজন ও মান উন্নয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। দেশে ও বিদেশে পাট ও পাটজাত পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে বাংলাদেশে আরও নতুন নতুন পাটকল স্হাপিত হচ্ছে। নতুন নতুন পাটকল স্হাপনে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগে চমৎকার পরিবেশ বিরাজ করছে এবং এজন্য সরকার প্রয়োজনীয় নীতিমালা প্রস্তুত করছে। পাটের বহুমুখিকরণ ও পাটজাত পণ্যের বাজার ব্যবস্হাপনায় সরকারের বিশেষ কার্যক্রমের ফলে পাট শিল্পের নতুন দিগন্ত উম্মোচিত হয়েছে। বাণিজ্যিক সম্ভাবনার আশার সঞ্চার করেছে। এতে করে ব্যাপক কর্মসংস্থান বাড়বে এবং দারিদ্র বিমোচনে সহায়ক ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।

 

পরিশেষে, পাটখাতের সার্বিক উন্নয়নে গৃহীত পরিকল্পনা, অর্থনৈতিক উন্নতি, অধিক কর্মসংস্হান সৃষ্টি ও দারিদ্র বিমোচনে ভূমিকা রাখবে এবং ‘সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ’ এগিয়ে যাবে-আরো বহুদূরে।



COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon